"বন্ধু বলে ডাকো যারে সে কি তোমায় ভুলতে পারে" সত্যিকারের বন্ধুকে কখনোই ভুলতে  পারা যায় না। প্রতিটা সম্পর্কের মধ্যেই জড়িয়ে থাকে বন্ধুত্ব শব্দ টা। যেটা বড়ো একান্ত, ভালোবাসার এবং বিশ্বাস এর সমন্বয়ে তৈরি হয়। কারোর কাছে বন্ধু মানে ক্লাসমেট, কেউবা বন্ধু মনে করে তার স্বামী বা স্ত্রীকে, কোনো কোনো মা-বাবা তার সন্তানের কাছে বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে উঠতে চান। 

তাই এই বন্ধু বা বন্ধুত্বের কোনো সংজ্ঞা হয়না। এক হৃদয়ের সাথে আর এক হৃদয়ের আত্মিক সম্বন্ধেই হলো বন্ধুত্বের সম্পর্ক। বন্ধুত্ব বলতে বোঝায় যাকে আমরা চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারি। যার সাথে মনের অনেক কথা ভাগ করে নেওয়া যায় যে কথাগুলো দ্বিতীয় আর কোনো মানুষের সাথে ভাগ করা যায় না। 


ফ্রেন্ডশিপ ডের উদ্যোগ

ফ্রেন্ডশিপ ডের সূত্রপাতের দিনক্ষণ নিয়ে ইতিহাস একটিও কথা বলেনি। তবে বছরের একটি বিশেষ দিনে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য বন্ধুর বাড়িতে খাবার পাঠিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা আমরা খ্রিস্টপর্বের ইতিহাস ঘাটলে পেয়ে থাকি।  আমরা অনেক পৌরাণিক ঘটনাতেও দেখতে পাই  বন্ধুত্ব পাবার জন্য জন্য ঈশ্বরের কাছে একজন বর পর্যন্ত চেয়ে ছিলেন। তবে সম্ভবত হলমার্ক কার্ড নির্মাতা জয়েস হল  সর্বপ্রথম বন্ধুত্বের জন্য আলাদা করে একটি দিনকে চিহ্নিত করার কথা চিন্তা করেছিলেন। 


ফ্রেন্ডশিপ ডের সূত্রপাত

সালটা ছিল ১৯১৯। সবেমাত্র শেষ হয়েছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলেও সেই সময়ের আবহাওয়াতে তার একটা জঘন্য ছাপ রয়ে গেছিল। সেই সময়ের থমথমে পরিবেশ কে একটু আনন্দ দেওয়ার জন্যই হয়তো ঘোষণা করা হয়েছিল আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার টি পালিত হবে ফ্রেন্ডশিপ ডে হিসেবে। কার্ড উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে সদ্য শেষ হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আবহাওয়ায়  শুরু হয় ফ্রেন্ডসিপ ডের আনন্দের জয়যাত্রা। শোনা যায় ১৯৩৫ সালে আগস্ট মাসের প্রথম শনিবারে আমেরিকার সরকার এক ব্যক্তিকে হত্যা করে।  

ঠিক তার পরের দিন অথাৎ রবিবার একজন বন্ধু আত্মহত্যা করে । সেই প্রতিবাদে মার্কিন কংগ্রেস ওই দিনটিকে স্বীকৃতি দান করেন বন্ধুত্বের দিবস হিসেবে।ডঃ আর্টেমিও ব্র্যাচোর প্রস্তাবে সারা পৃথিবীতে ইন্টার্নেশনাল ফ্রেন্ডশিপ ডে পালিত হয় ১৯৫৮ সালের ২০শে জুলাই। তারপর সভ্যতার অগ্রগতির  সাথে সাথে নতুন মাত্রায় সজ্জিত হচ্ছে ফ্রেন্ডশিপ ডে টি। ২০১১ সালে ৩০ জুলাই তারিখটিকে রাষ্ট্রপুঞ্জ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে’ হিসাবে চিহ্নিত করে।


ফ্রেন্ডশিপ ডে উদযাপন

হাত ভর্তি ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড, গ্রিটিংস কার্ড আদান প্রদান এবং ইনবক্সে মেসেজ এর মাধ্যমে করে কাটে আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার অর্থাৎ ফ্রেন্ডশিপ ডে। ফ্রেন্ডশিপ ডে তে বেশি চলন আছে  ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড যাকে আমরা বন্ধুত্বের স্মারক বলে মনে করি। এই ব্যান্ডটি অনেকটা রাখির মতো দেখতে। বিশেষভাবে বানানো এই ব্যান্ডটির   মেয়েদের বিনুনির আদলে তৈরি হয়েছে। ঠিক এমনই নকশার প্রচলন ছিল আমেরিকার আদিম মানুষদের মধ্যে। তারা নিজেদের হাতে এমনই ব্যান্ড তৈরি করে প্রিয় বন্ধুকে প্রদান করতেন। এই ব্যান্ড নিজে থেকে খুলে ফেললে বন্ধুত্বের সম্পর্কে ছেদ হতে পারে। 


২০১১ সালে ৩০ জুলাই দিনটিকে বন্ধুত্বের দিবস হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও। আমরা এখনো ফ্রেন্ডশিপ ডে বলতে আগস্টের প্রথম রোববারকে বুঝে থাকি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ গুলিতে অন্যদিনে ফ্রেন্ডশিপ ডে পালিত হয়। আলাদা করে মেয়েদের জন্য ফ্রেন্ডশিপ ডে পালিত হয় আগস্ট মাসের তৃতীয় রবিবারে। এই দিনটি কাটে বেশ মজায় সারাদিনই প্রায় থাকা হয় বন্ধুদের সঙ্গে।খাওয়া-দাওয়া ভুরিভোজ বেশ ভালই হয়। দিনটি রবিবার ছুটির দিন পুরো দিনটিই বেশ বন্ধুদের জন্য দেওয়া হয়।  আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার পড়েছে এবার ৬ই আগস্ট। এই সমাজের অনেক সম্পর্ক গুলি যখন ভেঙে যাচ্ছে তখন বন্ধুত্বের সম্পর্কের উপর আস্থা রাখুন। বন্ধু হন বন্ধুত্বকে বাঁচিয়ে রাখুন। উদযাপন করুন সমস্ত বন্ধুদের সাথে হই হুল্লোড় করে।